আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জীবনী
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জীবনী:
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সালে পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত এবং আলেম ছিলেন। মাতার নামঃ গুলনাহার বেগম। আল্লামা সাঈদীর স্ত্রীর নাম শেখ সালেহা বেগম। উনাদের চার সন্তান— রাফিক বিন সাঈদী (১৩ জুন ২০১২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান), শামীম সাঈদী, মাসঊদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী। আল্লামা সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকেই কামিল পাশ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি সহ বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘদিন অধ্যায়ন করেন। আল্লামা সাঈদী বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও উনার ভালো জ্ঞান ছিল।
অধ্যায়ন শেষ করেই আল্লামা সাঈদী ইসলামের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করে করে তিনি তাফসির মাহফিল করেন। শুধু তাই নয় পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। আল্লামা সাঈদীর তাফসিরের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম ইসলামী প্রচার অডিও ভিডিও রেকর্ড শুরু হয়। বিভিন্ন অডিও ভিডিও ক্যাসেট দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ইসলামের এই খাদেম দেশে বিদেশে দীর্ঘ ৫০ বছর সময় ধরে ইসলামের দাওয়াতী কাজ করেন।
১৯৭৯ সালে আল্লামা সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। বিভিন্ন মাহফিলের রাজনৈতিক কথা বলার কারণে ১৯৭৫ সালে তিনি ১ম কারাবরণ করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি বাদশাহের আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে তিনি হজ্জ পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় চলে যেতেন এবং সেখানে ইসলামের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। শুধু তাই নয়, তিনি পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশেরও সুযোগ হয়েছিল উনার।
ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল, কুরআনের তাফসির এবং তার সুন্দর বক্তব্য দানের ক্ষমতার জন্য ১৯৮০’র দশক থেকে দেশ ও বিদেশে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে সৈয়দ আলী হোসেনী খমিনির আমন্ত্রণে তিনি ইরানের বিপ্লব বার্ষিকী উজ্জাপন উপলক্ষে তেহরান সফর করেন। ১৯৯১ সালে তিনি সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে কুয়েত ও ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে যোগদান করেন একই বছর ইসলামী সার্কেল অফ নর্থ অ্যামেরিকা উনাকে “আল্লামা” খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৯৩ সালে অ্যামেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে আল্লামা সাঈদীকে “গ্র্যান্ডমার্শাল“ পদক দেয়া হয়। ২০০০ সালে দুবাই সরকার ৫০০০০ হাজারেরও বেশী মানুষের সামনে তাফসির পেশ করার আমন্ত্রণ করেন। এছাড়াও কাবার ঈমাম আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির সাথে লন্ডনে লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্ভধনি তিনিও আমন্ত্রিত হন।
আল্লামা সাঈদী ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে বাংলাদেশ পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে মর্মে দায়েরকৃত তরিকত ফেডারেশনের রেজাউল হক চাঁদপুরীর মামলার প্রেক্ষিতে ২৯ জুন ২০১০ সালে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে পুলিশ আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর যুদ্ধাপরাধ মামলা সহ আরো কিছু মামলায় হাইকোর্ড ফাসির আদেশ দেয়। আপিল বিভাগে মামলা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আমৃত্যু কারাদন্ড বহাল রাখে।
অবশেষ আল্লামা সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগেরদিন ১৩ আগস্ট রবিবার তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে উনাকে কারাগার থেকে গাজীপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। ১৫ আগস্ট ২০২৩ পিরোজপুরের সাঈদী ফাউন্ডেশনে জানাজা নামাজের পর সমাহিত করা হয়। (শিক্ষা বিডি)